| অন্য মনে - প্রবোধ চন্দ্র দাস | | আত্মজ - june |

 




এক একান্নবর্তী ফ্যামিলিতে জন্ম, নাম তার বিভুতি। বাবা-মা মাইগ্রেটেড ফ্রম ইস্ট বেঙ্গল ( বাংলাদেশ ) টু কোলকাতা। ওনাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে বিভুতি সর্ব্ব কনিষ্ঠ। কষ্টের মধ্য দিয়েই অন্য ভাই-বোনেদের ন্যায় মানুষ হয়েছে। টেনে-টুনে গ্রাজুয়েসান কমপ্লিট করা মাত্রই ঘর থেকে বিতাড়িত, যে এবার তোমার কর্ম তুমিই কর, মা-বাবা আর খাওয়াতে পারবে না।

   দিল্লিতে এক রিলেটিভ থাকার সুবাদে তার কাছেই যেতে বাধ্য হলো কোন কর্মের আকাঙ্খায়। করেও দিলেন তিনি, পাজ্ঞাবের কোন এক পেপার মিলে। স্বল্প মায়নার বেতনভুক  কর্মি, কোন রকমে দিন গুজরানো। তারপর কাজ শেখার পর নথিবদ্ধ কর্মীর নামে রেজিষ্টার্ড হওয়ায় কাজের খোঁজ নিত প্রতিনিয়ত।
    কিছু দিন পর অন্য ভাই-বোনের ন্যায় তাকেও বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো, কারন তার নাকি খাওয়-দাওয়াতে অসুবিধা হচ্ছিল।ইত্যোবসরে মাঝে-মধ্যে বাড়ি আসার সুবাদে পাশেরই পাড়ার কোন এক নন্দিনীর সাথে যোগাযোগ হয় এবং প্রনয় ঘটিত ব্যাপার ঘটে যায়। পর সমাচার ভালোবাসার পাত্রী হেতু ঐ সম্মন্ধই বাড়ি থেকে অনেক আবেদন নিবেদনের পর ম্যাচিউর হয় এবং শীঘ্রই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় পাত্র-পাত্রী উভয়েই। বিবাহের পর তারা পাড়ি দেয় কর্মস্থলে সেই পাজ্ঞাবেই। সেখান থেকে চাকরির উন্নতি কল্পে, ঘুরে ঘুরে গুজরাট হয়ে শেষে কিনা চাকদাতে এক পেপার মিলে স্থায়ি পদে
চাকরি হয়। সেখানেই বংশ বৃদ্ধি পায়, এক ছেলে ও এক মেয়ে হয় তাদের। বাচ্চাদের লেখা-পড়া কলোনীর প্রাইভেট স্কুলে হয়। চাকদা থেকে ডেইলি কমিউট করতে হতো।
    অবশেষে তাদের হায়ার এডুকেশন কোলকাতাতেই হয়। কারন ওখানে দুটো ঠেকই ছিলো।নিজেদের লিজ ফ্লাট এবং শ্বশুরালয়।যখন যেটা দরকার ব্যবহার হতো নির্দিধায়। ছেলে বড়, ওকে এম.কম, এম.বি.এ করানো হলো।চাকরিও পেল ভালোভাবেই। মেয়ে গ্রাজুয়েশনের পর করলো হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট। সেও সহসা চাকরি পেয়ে গেল। খোঁজা-খুঁজির কোন দরকারই পড়েনি, কারন সার্ভিস ওরিয়েন্টেড পড়া শুনা।
     বিভুতি ইতিমধ্যে চাকদা ছেড়ে উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুরে
অন্য ফ্যাক্টরিতে যোগদান করলো আরও হায়ার স্কেলে।সেখানেই রিটায়ার্ড হলো, তারপর ফিরে কোলকাতায়। তখন বাই-পাসের ধারে লোন নিয়ে একটি টু বিএইচকে ফ্লাটে অলরেডি পজেসান্ড। সবার থাকতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না।
    ছেলেও টিউসানির সুবাদে এক মোহিনীকে মন দিয়ে ফেলে এবং তার সাথেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।তাদের ঘরে একটি ফুট-ফুটে পুত্র সন্তানও জন্ম নেয়। তারা কসবায় একটি ফ্লাটও কেনে। সেখানে তারা সুখেই আছে। হাজব্যান্ড-ওয়াইফ দুজনেই ইনকাম করে।কোনও কাজই তাদের কাছে বাধা হয়ে দাঁডায় না।       
 এবার মেয়ের ব্যাপারে আসা যাক। মেয়ে বিভুতির ছোট সন্তান, নাম নমিতা। কয়েকটি নামকরা হসপিটাল, নার্সিংহোম এ কাজ করার পর ও একটা স্কুলে নন-টিচিং স্টাফে চাকরি পায়। সেই সুবাদে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওদেরই কোন একটা ফ্লাটের রুমে থাকতে দেয় এবং হাউস রেন্ট কেটে নেয়। এতে ওর সুবিধাই হলো কারন অনেকটা দূরত্ব হয় বাড়ি থেকে স্কুল।
     কিন্তু কাজের কাজ কি হলো, ওখান থেকে একটি ছেলের সাথে ওর ভালোবাসা হয়, ইভেন ঘরেও আসা-যাওয়া হতো ( পরে প্রকাশ পায় )। নমিতা বড় মেজাজি মেয়ে। দিনে কালে ছেলেটির সঙ্গে খাট-খটি হয় এবং ছাড়া-ছাড়িও হয়ে যায়।
তখন সে বাবাকে ( বিভুতি ) অনুরোধ করে পাত্র দেখার ইচ্ছা প্রকট করে। বাবাও সাথে-সাথে অন-লাইনে বেঙ্গলি- ম্যাট্রিমনিতে দিয়ে দেয়।কি আর বলবো এক মাসের মধ্যেই
জুটেও গেল। দুটো ভালো সম্মন্ধ আসে এবং তার একটিতে যোগাযোগ করলে সেটা পাকা হয়ে যায়। ফ্যামিলির সবাই বসে একদিন পাকা দেখা এবং বিয়ের ডেটও পাকাপাকি হয়ে যায়।
      ডেট পাকা হয়ে যাবার সুবাদে বিভুতি ম্যারেজ হলও দেখতে শুরু করে দেয়।মেয়েকে নিয়ে কোথায় না কোথায় গিয়েছিল। এবং আলটিমেটলি এ্যাডভান্স করাও হলো মেয়ের ইচ্ছানুযায়ী।যে ছেলের ( বিশ্বজিত ) সাথে বিয়ের ডেট ফিক্স হলো, তার সঙ্গে মেয়েটি দেখা-সাক্ষাত, সিনেমায় যাওয়া,
ঘোরা,রেস্টুর্যান্ট ইত্যাদি করতে লাগলো। আবার ভ্যালেন্টাইন ডে তে পাত্রীকে গিফ্টও দিয়েছে বিশ্বজিত ।
     আচম্বিতে একদিন ঘটনা কি ঘটলো, নমিতা এসে বাবা-মাকে বললো যে, সে বিশ্বজিতকে বিয়ে করতে পারবে না। তার সঙ্গে আবার পুরোনো ছেলেটির ( বাবা-মা জানতো না) সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে এবং দু’জনায় বিয়ে করতে রাজি আছে।সবই
বাবা-মায়ের অবর্তমানে নিজেই ফাইনাল করলো। নমিতার বান্ধবী, আশাবরীর থ্রুতে বিশ্বজিতকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে
যে, নমিতার এই বিয়ে যত এগিয়ে আসছে ততই ভয় পাচ্ছে।
বান্ধবীকে দিয়ে খবর দেওয়াতে বিশ্বজিতরা বুঝে গেছে যে, ডালমে কুছ কালা হ্যায়। বিশ্বজিতের বাবা বিভুতিকে ফোন করে। বিভুতি ফোন তোলে না। একদিন ওরা বলেই দিয়েছে যে,
মেয়ের বান্ধবী আশাবরীর সঙ্গে কথা বলুন। কিন্তু বিভুতি তাও কোন ফোন করে না এবং সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
     এখন এই পর্যায়ে আছে বিভুতি ওয়েট এন্ড সি করছে।
নমিতাকে বলে দেওয়া হয়েছে।ঘোড়া ডিঙিয়ে যখন ঘাস খেতে গেছ, তুমি তোমারটা বুঝে নেও। - আমরা আর তোমার ব্যাপারে নেই। তোমরা ডেট ঠিক কর এবং বিয়ে কর। আমি সম্প্রদান করে দেবো, আর কিছু জানি না,এটা বিভুতির বক্তব্য। ওদিকে বিশ্বজিতরা লিঙ্ক বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে এবং কোন ফোন কল করছে না একদমই।
      বর্তমানে এই স্ট্যান্ডই বজায় আছে, ১লা ডিসেম্বর ২০২১ এ বিয়ে হওয়ার কথা। আমরাও ওদেরকে শুভাশীর্বাদ পূর্বক শুভেচ্ছা দানে মঙ্গলাকাঙ্খী ;
আঙ্কেল এন্ড আন্টি।






Comments

Popular Posts