| শৈশবের স্মৃতিতে - ঋতম সাহা | | আত্মজ - june |
শৈশবের স্মৃতিতে
এখন আর ভাবতে পারিনা, তবুও লিখতে বসেছি,
এই ব্যস্ত সময়ে আবার কলম তুলেছি।
সময়ের কাটা পেরিয়ে শৈশবে ফিরে যাওয়ায় সকলের আজ বাসনা,
জানিনা কতটা মিটবে এই লেখায় আমার স্মৃতিচারণের সম্ভাবনা।
মনে পড়ে, বিদ্যুৎ চলে যাওয়া শৈশবের সেই অন্ধকার রাত কিবা দিন
জেনারেটরের আওয়াজে চলত না তর্কে আমেরিকা, পাকিস্তান কিংবা চীন।
রোজ দুপুরে লুকিয়ে ফিরে, খেলতে পালানোর চেষ্টা,
গ্রীষ্মেতে শুকনো গলা এখনো খোঁজে, কুলফিমালাইয়ে মেটাবে তেষ্টা।
মনে পড়ে, কালবৈশাখির ঝোড়ো হাওয়ায় পাড়া বেরিয়ে আম কুড়ানো,
জীবনের সাদামাটা পরিচ্ছেদে, হবেনা এই গল্পগুলো কভু পুরোনো।
তখন ছিলোনা আমাদের মধ্য ভেদ, লাল নীল সবুজ গেরুয়া,
জ্বর বাধিয়েছি ভিজে বৃষ্টিতে , ছিলাম সবাই বড্ড বেপরোয়া।
আমাদের মধ্যে ছিলোনা সম্পর্কের উত্তাপ, পরিবেশ নাতিশীতোষ্ণ,
এই ক্লান্তি ভরা ব্যস্ত যুগে, সুস্থ বেঁচে থাকাটায় আজ প্রধান প্রশ্ন।
মনে পড়ে, স্কুলের স্পোর্টসে শুধু টিফিনের জন্যেই দিতাম দৌড়,
কত নাস্তিকই যেতাম দেখতে দাদুর সাথে, কীর্তনে নিতাই হরি গৌড়।
ছুটির দিনে স্নানের বেলায় বুক চিরে পুকুরে সাঁতরে কাটাতাম জল,
এখন রেস্তোরাঁতে খাওয়া ছেলেটাও দিতো স্কুলে মিডডে মিল খাওয়ার ঢল।
সবাই এখন বড্ড ভীন্ন, ব্যস্ত সবাই আলাদা আলাদা লক্ষ্যে
বাঁচিয়ে রাখা কিছু পূর্ণ অপূর্ণ আশা প্রতিটি বিদীর্ন বক্ষে।
কারো লক্ষ্যে চাকরি, তো কেও খোঁজে ব্যবসাতে পথ উন্মুক্ত,
কেও বাঁচে শিল্পীসত্ত্বায়, পেশাতেই খুঁজে নেয় সবাই তার সুখের উৎস।
সবাই এখন ভীষণ ব্যস্ত, জীবনের পথে গেছে বেঁকে অন্যরকম,
চলার পথে হয়েছে অভিজ্ঞতা, সহ্য করে কত আক্রমন।
ভালোবাসি বলেও বন্ধুত্বে পর্যন্ত ধোকা দিয়েছিলো যারা,
বিপদে কেও না থাকুক, এখনো তাদের পাশে থাকবো আমরা।
সম্পর্কটা হয়তো আর উঠবেনা গড়ে সেই বিশ্বাসে,
আমাদের বন্ধুত্বে ভালোবাসা এখনো সততার আবেগে ভাসে।
ছোটবেলায় স্কুলে কোনও মতে দৌড়ে ,
প্রথম বেঞ্চে জায়গা পেলে দিতাম গাল ভরা হেসে,
হাইস্কুলে উঠেই সবাই ধরেছিলাম ব্যাকবেঞ্চ,
সময় পরিবর্তনের সেই স্মৃতি কেবলই আসে ভেসে।
স্কুলছুটির পরে সাইকেল চেপে,
চিনেছি কত অচেনা অলিগলি রাস্তা,
পরীক্ষার ঘরে একটু সাহায্য করে দিলেই,
শিক্ষকরা তখন আমাদের কাছে সাচ্চা ফেরেস্তা।
টিউশানের গাদাগাদিতে কেবল আড্ডা,
ঢুকতো না মাথায় কিছু পড়াশোনা,
প্রথম দেয়া সিগারেটে টান কত যুবকের
জীবনের কত তাদের প্রেম ,মেয়েদের আনাগোণা
টিউশান ফাকি দিয়ে, স্কুলের পাচিল টপকিয়ে গঙ্গার পাড়ে যাওয়া,
মনে পড়ে, জীবনে সবার নাকি প্রথম ভালোবাসা, শুধুই কাওকে কাছে পাওয়া।
তখন শিক্ষকরা মারতে বেতে, পারলে হাত দিয়েই,
তাদের নামেই চলতো কুটকাচালি দলে দলে,
এখন তাদের সামনে দেখেই, মাথা আসে নেমে,
স্মৃতি ফেরে চোখ ভিজে আসে চলে।
এই সকল স্মৃতি রইবে চির অমলিন,
করে স্বপ্নে যাওয়া আসা,
এই স্মৃতি গুলোই কেবল ধ্রুবক,
জীবন খাতার সকল পাতাতেই এখন দেখি নিরাশা।
এখন অনেক দূরে আমরা , সারাদিনই জীবনের ব্যস্ততায় বাঁচি,
তবুও বারবার বলে ওঠে শৈশব, হৃদয়ের খুবে কাছাকাছিই আছি।
Comments
Post a Comment