| সারারাত কেটে যায় এই সব ভেবে || পর্ব ৩।

  দেবনাথ স্কুলের ইউনিট টেস্টের দিনগুলো .......



আমাদের  স্কুলের  ইউনিট টেস্ট গুলো ছিলো খুব ভয়ের। কারণ সারা বছর ধরে সেগুলো হত আর বছর শেষে অ্যানুয়াল পরীক্ষায় প্রতিটা থেকে একটা পার্সেন্টেজ যোগ হতো। কপাল এর ফেরে যদি কোনওটায় খারাপ হয়, তাহলে তার প্রভাব গিয়ে পড়ত ফাইনাল রেজাল্ট এর ওপর।

পরীক্ষা গুলো কোনও জাগতিক বাধা-বিপত্তি মেনে চলত না। যদি সত্যি-সত্যি ভয়ানক গেরোয় পড়ে গিয়ে থাকো আর তার মধ্যেই এসে উপস্থিত হয় ইউনিট টেস্ট, তাহলে বাবা কিম্বা মার কাছ থেকে সই করিয়ে চিঠি জমা দিলে তবে ছাড়।তবে এই নিয়মটা বাকিদের জন্য খাটতো।  পরীক্ষা চলার সময়ে আমার এক বিন্দু জ্বর ও আসতো না আর যদি এসে ও থাকতো তাহলে মা হেড ম্যাডামকে বলে আলাদা ঘরে পরীক্ষা দেওয়া ব্যবস্থা করাতো - এও আমি জানি।  

তা, ক্লাস এইটের  ইউনিট টেস্ট পরীক্ষা হচ্ছে।  জিওগ্রাফি। কুড়ি অথবা ৩০  নম্বরের অবজেক্টিভ প্রশ্ন।আমার সঠিক মনে নেই।  

সবকটাই পেরেছি শুধু জাপানের ক্যাপিটাল কি কিছুতেই মনে পড়ছে না। বসে-বসে আকাশ-পাতাল ভাবছি, এমন সময়ে দেখি ক্লাসের একজন  খাতা জমা দিতে উঠে যাচ্ছে। ( নামটা এতো দিন পর আমার মনে নেই। ) 


আমার পাশ দিয়ে সেই মেয়েটি  যাবার সময়ে আমি  চুপিচুপি জিজ্ঞেস করেছি উত্তরটা। মেয়েটির  ছোট্টখাট্ট চেহারা, গুটগুট করে হাঁটে, মাথায় গিসগিস করছে দুষ্টু বুদ্ধি যত।

ও নিজের সেই বিখ্যাত মিচকে হাসির সাথে বললো,”মেরা বয় ফ্রেন্ড   কা নাম হ্যায় উও সোচ , উওহী হ্যায় ক্যাপিটাল”!! কথাটা বেশ জোরেই সবাইকে শুনিয়ে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাস এর সঙ্গে বলে দিলো । ম্যাডাম অবশ্য তখন ঘরে ছিল না ।

এদিকে  কার বয়ফ্রয়েন্ডের কি নাম তা আমার কোনোদিন মাথায় থাকতো না । যদিও আমি এবং  আমার চার বন্ধুকে সেই মেয়েটি অনেক কেটে দেখিয়ে তার বয়ফ্রয়েন্ডের নামে অনেক ভালো কথা বলেছিলো , সাথে নাম টা ও।  কিন্তু সেই সংকটময় মুহুর্তে কিছুতেই মনে পড়ছিল না ছাই।

আমাদের সেই সময় বলা হতো প্রেম বিষয়টা খুব খারাপ।  তাই ওই তেরো বছর বয়সে যারাই প্রেম করতো তাদের কেই আমরা ফালতু মনে করতাম।  তাই মেয়েটির গল্প অত্যন্ত মন দিয়ে শুনলেও আমি এবং আমার চার বন্ধু মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করিনি।  

ব্যাস,  ঘন্টাও পড়ে গেলো। ভেবেই চলেছি । ম্যাডাম খাতা নিতে উঠেছে।  হঠাৎ করে পেছন থেকে একজন বললো " ওটা টোকিও হবে "।  

মনে আছে, সেই টেস্ট এ সর্বোচ্চ নম্বর পেলো  এই অধম।

আমার ছোটোবেলার সব বন্ধুরা, সব দুষ্টুমি, সব দুরন্তপনা, খুব করে মনে পড়ছে আজকে।

জীবন এখন অনেক বেশি জটিল। আজকালকার বাচ্চারা যারা হাতে স্পোর্টস ঘড়ি, ব্র্যান্ডেড স্নীকার পায়ে দিয়ে প্রাইমারি স্কুল এ যায় আর পৌঁছে ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বের করে ফেলে , তারা কেমন দরকচা মেরে গেছে বলে আমার মনে হয়। বড় হবার আগেই পেকে বসে আছে, না বড়, না ছোটো একটা অদ্ভূত প্রজাতি তৈরী হচ্ছে। তাদের জন্যে একটু করুনাই হয় আমার।


Comments

Popular Posts