সারারাতে কেটে যায় এই সব ভেবে।। পর্ব - ১১।

 ফেইসবুক -এ মনুষ্যকুলের শ্রেণী বিভাগ : -



হ্যাপি হোলি, বাৎসরিক নারীবন্দনা পেরিয়ে এখন ফেসবুক  থিতু হয়েছে একটি শ্রীলংকান গানে ( গানটা শুনতে বেশ ভালো , তবে লিরিক জানি না )।  অবশ্যই তা কিছুদিনের জন্য। এটা আমাদের মস্ত গুণ যে আমরা  এঁটুলির মতন কোনো একটি  বিষয়ে আটকে থাকি না । 


A থেকে Z পর্যন্ত সমস্ত সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয়ে কথা না বলে কি থাকা উচিত? আমরা সমাজবদ্ধ জীব না? পিঁপড়েদের মত। হুলুস্থুল দেশী-বিদেশী বিষয়ে যদি কথাই না বলতে পারলাম তবে দিনের মধ্যে পঁচিশ ঘন্টা ফেসবুকে চোখ লাগিয়ে বসে থেকে কি ছাতার মাথা লাভ হলো রে বাবা? 


সোজাসুজি কেউ আমার মতামতের তোয়াক্কা যে করে না সে তো হাড়ে হাড়ে বুঝে গেছি এতদিনে। তা বলে মতামত দেব না? গণতান্ত্রিক অধিকার বলে কথা।


 তা মতামত প্রকাশের এত সুন্দর একটি ব্যবস্থা থাকতে বিছানায় শুয়ে, টয়লেটে বসে আঙ্গুলের একটু নাড়াচাড়া করলেই যদি বিশ্বব্রম্ভান্ডের আপামর জনগনকে আমার বিচক্ষনতার দাপট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করে ফেলা যায় তবে আর কেন লোকের মুখোমুখী চাট্টি কথা বলে সমস্যায় পড়ি? 


সুতরাং ফেসবুক স্টেটাস আপডেট জিন্দাবাদ।  

সারা বিশ্বের ফেসবুক করা মানুষকে আমার তাই আজ মনে হলো কয়েকটা শ্রেণীতে ভাগ করা যায় কি না ! 

১ ) ফেসবুক বিষয়টা নিয়ে তাদের কোনো উৎসাহ নেই।  মানে হয়তো তারা বিষয়টা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না নয়তো তাদের ফেসবুক করতেই ভালো লাগে না। 


২ ) যাদের fake id আছে অর্থ্যাৎ ফেইসবুক নামক বিষয়টা তাদের ঠিক পছন্দ না।'আমি সকলের চেয়ে আলাদা'  কিন্তু সেটা বাইরে বাইরে সাজার জন্য ,  ভিতর ভিতর বস্তুটির প্রতি প্রেম আছে।  তাই তারা fake id খোলেন। এবং খুলে ' দেখি দেখি অমুকে কি বলল' বা 'তমুকে কোথায় বেড়াতে গেল' এইসব করেন। 

অবশ্য অনেক মানুষ আছেন ( যাদের আমি চিনি ) তারা এই রকম fake id  খুলেছে , শুধুমাত্র প্রেমিক / প্রেমিকার উপর চোখ রাখার জন্য , পাশের বাড়ির বৌদির ছবি দেখার জন্য কিংবা " ঐসব " ছবি দেখার জন্য। 

৩ ) এঁনারা হলেন করিতকর্মা প্রজাতির মানুষ। যেকোনরকম সামাজিক, রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত টালমাটালে চটপট বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করেন। ঝটপট ফেসবুকে আপডেট দিয়ে ফেলেন তারপর বিষয়টির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মানে এদের দেশ , রাষ্ট্র নিয়ে খুব চিন্তা।  কথায় কথায় রাষ্ট্র এই করেছে ,ভয় দেখানোই রাষ্ট্রের কাজ। এরা বিছানায় বসে বসে " লড়কে লেঙ্গে " এই মনোভাবে বিশ্বাসী।  লিখিত বাদ-প্রতিবাদে পাতার পর পাতা ভরে যাবে। সত্যি সত্যি বিষয়টি নিয়ে না ভাবলে এত যুক্তি আসে না কলমে থুড়ি কিবোর্ডে। কিন্তু ঘরোয়া জটলায় কেউ কোনো মহিলার পোশাক নিয়ে সরস মন্তব্য করলে চুপ করে থাকা বা হ্যা হ্যা করা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না তাঁদের।   


৪ )  হঠাৎ একদিন সকালে গলার কাছটায় কিরকম যেন একটা গুজগুজ করছে বলে ঘুম ভেঙ্গে এরা দেখলেন সবকিছু কেমন যেন লাগছে। কি যেন একটা বলার আছে। গুরগুর করছে ভেতরটা। কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না ব্যাপারটা কি। কিছুক্ষণ পরে যেই পাশের লোকজন সকালে 'গুড মর্নিং' এর জায়গায় 'সুপ্রভাত' বলল অমনি আপনার টং করে মনে পরে গেল "ওহো! আজ তো একুশে ফেব্রুয়ারী।" অমনি আপনি বাংলা ভাষার অতীত, ভবিষৎ, বর্তমান নিয়ে ভয়ানক রকম চিন্তিত হয়ে উঠলেন আর সাথে সাথে একটা সাড়ে পঞ্চান্ন লাইনের স্টেটাস আপডেট দিয়ে চরাচরকে বাংলা ভাষা সম্পর্কে উদ্দীপ্ত করেই ছাড়লেন।

৫ )  এঁনারা অর্থ্যাৎ এই প্রজাতিটি  "আমায়ও এই বিষয়ে বলতে হবে" এই ভাবনায় এত বেশি বিভোর হয়ে থাকেন যে, যে বিষয়ে বলতে চাইছেন, সেটি সম্পর্কে আদ্যপান্ত ভাবার আর সময় পান না। ঝটপট আপডেটটা দিয়ে ফেলেন। সকলেই বলছে, অতএব আমার কি আর চুপ করে থাকা চলে? সমাজ সংসার সম্পর্কে আপডেটেড না থাকা একজন বোকা হাঁদা ভাববে না তো সকলে? অতএব সকালে বিকেলে বাজার চলতি বিষয় নিয়ে আপডেট দিয়ে যাও। 

'সাহারায় সীতাহরণ' থেকে শুরু করে 'হন্ডুরাসে হাহাকার' বা 'বোর্নিওর বিভীষিকা' তা সে যাই হোক না কেন পৃথিবীর জনপ্রিয় কোনো বিষয়ই ছাড়া পায়না এই  গোষ্ঠীর হাত থেকে। সকল বিষয়েই এঁনারা প্রাজ্ঞ। সমাজ, রাজনীতি, কূটনীতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান, সঙ্গীতকলা, খেলাধূলা, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র প্রভৃতি পৃথিবীর সকল বিষয়েই একজন মানুষের এত জ্ঞান যে একজীবনে কি করে হয় এ এক রহস্য আমার কাছে। প্রণম্য এঁনারা। 

৬ ) এই  প্রজাতিটি সবচেয়ে ভালো থাকে। ফেসবুকে জন্মদিনের কেক কাটার ছবি লাগায়, নতুন রান্না করলে তার শৈল্পিক ছবি তুলে লাগায়, নতুন জামা কিনলে নতুন নতুন ভঙ্গিতে মুখ দেখায়, বাচ্চার প্রতি ঘন্টায় হাসা-কাঁদা-খাওয়া-পটি করার ছবি দেখায়, নামী জায়গায় বেড়াতে গিয়ে জায়গার তুলনায় নিজের নতুন সানগ্লাসের ছবি লাগায় তাতে ব্র্যান্ডের নামটা দেখা গেলে আরো ভালো। 


৭ ) এ প্রজাতিটির কাজ দিনে পঞ্চাশটা মিম শেয়ার করা।  এরা  হাস্যকৌতুক পছন্দ করেন। এদের ফেসবুকে রাখলে আপনার মন যদি কখনো খারাপ হয় তাহলে এদের শেয়ার করা পোস্ট দেখে আপনি হালকা হলেও হতে পারেন 

৮ ) এদের কাজ প্রতিটা পোস্ট শেয়ার করে নিজের প্রেমিক / প্রেমিকা কে ট্যাগ করা। প্রতিটা পোস্ট শেয়ার করার পর নিজেদের মতামত ক্যাপসন এ দেওয়া। 


৯ )  এঁনারা চারপাশের হালহকিকতের বিশেষ ধার ধারেন না। আপডেট থাকে মাঝে মাঝে। সেটা নিতান্তই ব্যক্তিগত।যেমন, বোর হচ্ছি, ঘুম পাচ্ছে, বেড়াতে যাচ্ছি, এই সিনেমা দেখছি, দেখে মাথায় ব্যথা করছে......ইত্যাদি ইত্যাদি। এতে সুবিধা হচ্ছে, বহুল প্রচলিত বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি তৈরী রাখতে গিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। সেলফি তোলার অনেক সময় পাওয়া যায়। কোনো ঝগড়ায় না থেকে কারো সাথে মনোমালিন্য হবার ভাবনা নেই। আর কোনো বিতর্কিত বিষয়ে খোলাখুলি মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে শেষে নিজের তৈরী কাঁচের স্বর্গতে পাটকেল পড়বার ভয় নেই। সবদিক থেকেই একদম সঠিক-নিশ্ছিদ্র-নিরাপদ ব্যাপার।

আপনি কোন দলে পড়েন ? 

Ok ............ Bye !!!!!!!!!! 

Comments

Popular Posts