সারারাত কেটে যায় এই সব ভেবে - পর্ব ১৫
সকাল ৪ টা – চারিদিকে অন্তত চারটে অ্যালার্মের পিক-পিক-পিক, ট্যানা-ন্যানা-ট্যানা-ন্যানা, কুলু-লুলুলু ইত্যাদি আরম্ভ হয়ে গেলো। কি ব্যাপার !! আজকে কি? কয়েক মিনিট পরেই শোনা গেলো মুহুর্মুহু শঙ্খধ্বনি আর তারপরেই ‘ইয়া আআআআআ চণ্ডী’ বলে অতি পরিচিত সেই গান। ওহো, আজ তো মহালয়া। যাক,পুজো চলে এলো । বাপি ভাগ্যিস অ্যালার্ম টা দিয়ে রেখেছিলো।
সকলকে মনে মনে ক্ষমা করে দিয়ে আবেগে ভাসতে ভাসতে রেডিও নিয়ে ছাদে চলে গেলাম ।
মহালয়া মনে করিয়ে দেয় ছোটবেলার কথা। বাতাসে পুজোর গন্ধ, নতুন জামা, ভাগ্য ভালো হলে নতুন জুতো, পায়ে ফোস্কা, দেদার খাওয়া, ক্যাপ ফাটানো, নো পড়াশোনা ইত্যাদি অনেক অনেক রকম ভালো ভালো স্মৃতি উস্কে দেয়। সাথে বয়ে আনে মন কেমনের চিনচিন। সব মিলিয়ে হৃদয়ের খুব কাছের জিনিস।
এখানে সেই অত্যাচার নেই। নিজের সুবিধা মতন ‘ভোর’ সিলেক্ট করার স্বাধীনতা আছে।
যাই হোক, বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবো এমন সময়ে শুরু হল ‘বাজল তোমার আলোর বেণু’। এটা আমার ফেভারিট পার্ট, এদিকে মোটরের ভোঁ-ভোঁ শব্দে আর এক্সহস্টের আওয়াজে কিছুই শোনা যাবেনা, তাই খানিকক্ষণ সব বন্ধ করে। আঃ, সকালটা যেন জুড়িয়ে গেলো। চোখে জল এসে গেলো আবারও।
মহালয়া শুনতে শুনতে আমার প্রতিবারই চোখে জল আসে। এর একটা লজিকাল এক্সপ্ল্যানেশান বের করেছি। ছোট থেকেই আমি খুব নরম প্রকৃতির মানুষ, সামনে কেউ দুঃখ পেলে আমারও কেমন দুঃখ দুঃখ লাগে। তা সব গানই টেনে টেনে মিহি সুরে গাওয়া, তার ওপর সিংহভাগ সময় জুড়ে ওই ট্রেডমার্কা সানুনাসিক ব্যারিটোনে কিছুটা ধমক – কিছুটা আবেগে কাঁপানো টানা আবৃত্তি শুনে নিছক রিফ্লেক্সেই চোখ ঠেলে কান্না বেরিয়ে আসে। অনেকটা এক বাচ্চার কান্না শুনে বাকী বাচ্চাদের ঠোঁট ফোলানর মতন রিফ্লেক্স।
টিভি তে সব পাওয়ারফুল গডেরা তাঁদের পাওয়ার রেডিয়েশান শুট করছে। এবার সব রেডিয়েশান এক জায়গায় মিট করে এক খুব সুন্দরী কিন্তু খুব পাওয়ারফুল গডেস তৈরি হচ্ছে।
এই শুনতে শুনতে স্নানের ঘরে চলে যাই , বারিধারার আওয়াজে চাপা পড়ে যায়
“বিধেহি দেবি কল্যাণং বিধেহি বিপুলাং শ্রিয়ম্ ।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ” ইত্যাদি।
সারাদিনের পর আর মনেই পড়েনা, আজ বিশেষ একটা দিন ছিল। কোন এক সুদূর অতীতে, যেন গত জন্মে, এই দিনটা আসন্ন এক সুসময়ের খবর আনত। যাকে মা-জেঠিমারা বলত ‘বচ্ছরকার দিন’।
এরপর একটাই কথা বলার থাকে – দাও ফিরে সে মহালয়া .................
Comments
Post a Comment