Entbehren sollst du! sollst entbehren!

 



Entbehren sollst du! sollst entbehren!
Das ist der ewige Gesang,
Der jedem an die Ohren klingt,
Den, unser ganzes Leben lang,
Uns heiser jede Stunde singt.

রবীন্দ্রনাথ ইন্দিরা দেবীকে লিখছেন, " নতুনের মতো এমন স্বল্পস্থায়ী জিনিস আর কিছুই নেই। মানুষের হৃদয়টা সৌভাগ্যক্রমে এমন তরল যে প্রায় প্রত্যেক পাত্রেই অল্পকালের মধ্যেই সে আপনাকে মাপে মিলিয়ে নিতে পারে...."

প্রতিটি চিঠি পড়ার সাথে সাথে একেক  ঋতু বদলের ঈঙ্গিত পাচ্ছি , প্রতিদিনের অতি ক্ষূদ্রাতিক্ষূদ্র অনুভুতির টের পাচ্ছি, প্রানভরে রবিবাবুকে উপলব্ধি করছি আর মহীরূহসমান রবীন্দ্রনাথের দেখা পাচ্ছি। প্রসাদের সাদাভাবটি যেমন চেখে দেখছি তেমনই উচ্চকোটির মদিরার স্থানূ নেশাটাও যেন চড়ছে। এককথায় মনকে প্রাণের সাথে স্থবিরতার অচ্ছেদ্য বন্ধনে বেঁধে দিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি চিঠি।।

কবি তাঁর জীবনের গভীরতম ভাষ্য ‘ছিন্নপত্রাবলী’তে উল্লেখ করেছেন। তিনি জীবনে যে পরিমাণ চিঠি লিখেছেন তা আর কোনো সাহিত্যিক লেখেননি। তাঁর চিঠি কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। প্রধান দু’টি শ্রেণী হচ্ছে আত্মউদঘাটনমূলক পত্র এবং প্রয়োজন নির্ভর পত্র। তিনি এক জীবনে যে চিঠি লিখেছেন ছাপালে দশ হাজার পৃষ্ঠার বই হবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঠকমাত্র প্রশ্ন করবেন তা হলে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবদ্দশায় কতগুলো চিঠি লিখেছিলেন? এই চিঠির পরিমাণ পাঁচ হাজারেরও বেশি। চিঠিগুলো তিনি লিখেছিলেন পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে।

রবীন্দ্রনাথ যাঁদের কাছে চিঠি লিখেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন : নির্মলকুমারী মহলানবিশ, আন্নদাশঙ্কর রায়, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় (কথাসাহিত্যিক), প্রমথ চৌধুরী, দীনেশচন্দ্র সেন, ধুর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, নন্দগোপাল সেনগুপ্ত, নন্দলাল বসু, নেপালচন্দ্র রায়, নির্ঝরিনী দেবী, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় (রবীন্দ্র জীবনীকার), প্রতিমা দেবী, প্রিয়নাথ সেন, বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিধুশেখর শাস্ত্রী, বুদ্ধদেব বসু, মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, মীরা দেবী, মৃণালিনী দেবী, মৈত্রেয়ী দেবী, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, শান্তা দেবী, শীশচন্দ্র মজুমদার, সুধাকান্ত রায় চৌধুরী, স্বর্ণ কুমারী দেবী এবং ইন্দিরা দেবী।

ভিড়ের আড়ালে অন্তরঙ্গজনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পত্রালাপ যে সাহিত্য তার প্রমাণ কবির ভাইঝি ইন্দিরা দেবীকে লেখা ছিন্নপত্রাবলী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মে ইন্দিরা দেবীকে চিঠি লিখেছিলেন শিলাইদহ থেকে। এই চিঠির প্রতিটি শব্দ এবং বাক্যে কবির সাহিত্য সৃষ্টির অসাধারণ দক্ষতা লক্ষ্য করা যায়।
‘আমি প্রায়ই মনে করি, এই তারাময় আকাশের নীচে আবার কি কখনও জন্মগ্রহণ করব? যদি করি, আর কি কখনও এমন প্রশান্ত সন্ধ্যাবেলায় এই নিস্তব্ধ গোরাই নদীটির উপর বাংলাদেশের এই সুন্দর একটি কোণে এমন নিশ্চিন্ত মুগ্ধ মনে জলিবোটের উপর বিছানা পেতে থাকতে পাব? হয়তো আর কোন জন্মে এমন একটি সন্ধ্যাবেলা আর কখনো ফিরে পাব না। তখন কোথায় দৃশ্যপরিবর্তন হবে। আর কিরকম মন নিয়েই বা জন্মাব। এমন সন্ধ্যা হয়তো অনেক পেতেও পারি, কিন্তু সে সন্ধ্যা এমন নিস্তব্ধভাবে তার সমস্ত কেশপাশ ছড়িয়ে দিয়ে আমার বুকের উপর এত সুগভীর ভালোবাসার সঙ্গে পড়ে থাকবে না। আমি কি এমন মানুষটি তখন থাকব? আশ্চর্য এই আমার সবচেয়ে বড় ভয় হয় পাছে আমি য়ুরোপ গিয়ে জন্মগ্রহণ করি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৫ সালের ১৮ জুলাই শিলাইদহ থেকে পুত্র রথীন্দ্রনাথকে লিখেছেন : ‘রথী, শিলাইদহে এসেছি।… অনেকদিন পরে জলের ধারা ও সবুজ মাঠের সংশ্রব ও নির্জন পেয়ে আমি যেন নিজের সত্যকে আবার ফিরে পেয়েছি। এখানেই সুদীর্ঘকাল থাকতে ইচ্ছা করছে। নিভৃত প্রকৃতির হাতে সুশ্রুষা আমার পক্ষে একান্ত দরকার - সে জন্যই জীবনের ও সংসারের সমস্ত জঞ্জাল ছিন্ন করে ফেলে সুদূরে পালাবার জন্যে আমার মন এত ছটফট করছিল।’

রবীন্দ্রনাথ শেষ চিঠি লিখেছিলেন পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীকে। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে ১৯৪১ সালের ৩০ জুলাই ৭টি বাক্যের ওই চিঠিতে তিনি লেখেন : ‘তোমাকে নিজের হাতে কিছু লিখতে পারিনে বলে কিছুতে লিখতে রুচি হয় না।’ স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে তিনি লিখেছিলেন : ‘ভাই ছুটি বড় হোক্ ছোট হোক্ মন্দ হোক্ একটা করে চিঠি আমাকে রোজ লেখ না কেন? ডাকের সময় চিঠি না পেলে ভারি খালি ঠেকে।’ 

প্রতিদিন চিঠি পাবার আশায় তিনি ডাক বাক্সের দিকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন। 

বালিকা বন্ধু রানুকে লিখেছেন : ‘মনে করছিলুম কাল তোমার চিঠি পাব। কালই পাওয়া উচিত ছিল। পোস্ট অফিসে কালই নিশ্চয় এসেছিল, কিন্তু পোস্টমাস্টারের অসুখ করচে বলে পশ্চিমের ডাক কাল আমাদের দেয়নি, আজ সকালে দিয়ে গেছে।’

রবীন্দ্রনাথের চিঠিতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, দেশ-বিদেশের ভ্রমণ প্রসঙ্গ ছাড়াও পাওয়া যায় ঈশ্বর প্রসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক ভাবনা। আছে তার কাব্য, গল্প, উপন্যাস রচনার কথা। 

আছে নিজের আঁকা ছবির কথা, নববর্ষের কথা, ধর্মচিন্তার বিষয়, জমিদারীর কথা, জন্মদিনের কথা, নারী প্রসঙ্গ ও স্ত্রী স্বাধীনতার কথা, পল্লী উন্নয়ন প্রসঙ্গ, পল্লী বাংলার কথা, সাময়িক পত্র-পত্রিকা ও তিনি যে সব বই পড়েছেন তার কথা, সমকালীন কবি-সাহিত্যিকদের কথা, সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্য সমালোচনার কথা, বিশ্বভারতীর কথা, শান্তিনিকেতনের উৎসব অনুষ্ঠানের কথা, মানবধর্মের কথা, কবি কালিদাসের কথা, রাজনীতি-সমাজনীতির কথা, শিক্ষা ও পঠন পাঠনের কথা, ইংরেজ কবিদের কথা, সংগীত প্রসঙ্গ, শিলাইদহের প্রসঙ্গ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা কথা এবং রামায়ণ মাহাভারতের কথা।

গত দু -সপ্তাহ ধরে আমি এই বই পড়ে শেষ করেছি। বইটি পেয়েছি আমি পিডিএফ আকারে। এখানে যে বইয়ের ছবিটি আমি দিয়েছি , সেটি আমার বন্ধু রণদীপ পাঠিয়েছে। আপনার যদি বইটা না পড়া হয়ে , পড়ে নিন। 

Comments

Popular Posts